হযরত শাহজালাল(রহঃ) এর মাজার ,সিলেট।



                     হযরত শাহজালাল(রহঃ)দরগাহ
                

 বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও বহুল পরিচিত জায়গা হল সিলেট শাহজালাল(রহঃ) এর মাজার।বিশেষ করে বাংলার মুসলমানদের কাছে অধিক সম্মানের এবং প্রিয় জায়গা এটি।মূলত শাহ জালালের দরগাহ হল সিলেট শহরের একটি আধ্যাত্মিক স্থাপনা, যা মূলত ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে আগত পাশ্চাত্যের ইসলাম ধর্মপ্রচারক শাহ জালালের বাসস্থান ও শেষ সমাধি।

এই দরগাহটি সিলেট শহরের উত্তর প্রান্তে একটি টিলার উপর অবস্থিত। কারো কারো মতে সিলেট ভূমির মুসলিম সভ্যতা ও ধর্মমত এই দরগাহকে কেন্দ্র করে প্রসার লাভ করেছে।হযরত শাহ জালালের লৌকিক ও অলৌকিক স্মৃতি বিজড়িত এই স্থান সিলেটের অন্যতম পূণ্য তীর্থ হিসেবে পরিচিত।

ঐতিহাসিক তত্ত্বনিধির মতে এই দরগাহ থেকে প্রেরিত শাহ জালালের সঙ্গী অনুসারীদের দ্বারা ঢাকা, ময়মনসিংহ, ত্রিপুরা, কুমিল্লা ও আসাম প্রভৃতি স্থানে মুসলিম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রচার ও প্রসার লাভ হয়েছে।এখানে রয়েছে দেখার মত বেশ কিছু নিদর্শন। হযরত শাহজালালের সমাধিতে রয়েছে সোনার কৈ, মাগুর ইত্যাদি দরগাহের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও শাহ জালালের ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদি দর্শনার্থীদের দেখার ব্যবস্থা। যার মধ্যে রয়েছে দরবেশের ব্যবহৃত তলোয়ার, কাঠের তৈরি খড়ম, হরিণের চাম্রা দ্বারা নির্মিত নামাজের মোসল্লা, তামার নির্মিত প্লেট এবং বাতি।এখানে উল্লেখ্য যে, তামার নির্মিত বাটি বা পেয়ালায় আরবিতে কিছু কালাম লিখিত আছে যা মুসলিম দর্শনার্থীদের দেখে ভাল লাগার কথা।

দরগাহ মিনারের মাথায় অবস্থিত আলোকোজ্জ্বল আল্লাহু শব্দ এবং লিখিত আরবি হরফ।
  
শাহ জালালের সমাধিকে দরগাহ টিলা বলে অভিহিত করা হয়ে থকে।টিলার উত্তর প্রান্তে প্রাচীর বেষ্টিত স্থানে শাহ জালালের সমাধি অবস্থিত। চার কোণে রয়েছে চারটি উঁচু স্থম্ভ দ্বারা তা নির্মিত বলে জানা   যায়।আবার রয়েছে দরবেশের সমাধির পশ্চিম প্রান্তে প্রাচীর সীমা ঘেঁষে একটি ছোট মসজিদ যেখানে মুসলিম দর্শনার্থীরা নামাজ পড়ে ও অন্যান্য ইবাদত করে হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করে থাকে।

যতদুর জানা যায় এই মসজিদ টি সিলেটের তদানীন্তন মাজিষ্ট্রেট ও কালেক্টর উইলস দ্বারা পুনঃনির্মিত হয়।দরবেশের সমাধির পুর্ব পশ্চিমে যথাক্রমে ইয়ামনের যুবরাজ শেখ আলী ও ভারতের গৌড় রাজ্যের উজির মকবুল খানের কবর রয়েছে।এই কবরগুলো তাদের কথা সরন করিয়ে দেয়। শাহ জালালের দরগাহর দক্ষিণ দিকে প্রবেশ পথে বাহির হতে পাশে ছিল্লাখানা ও দরবেশের সহাধ্যায়ী হাজী ইউসুফ, হাজী খলিল ও হাজী দরিয়া নামক এই তিন জন অলির সমাধি বিদ্যমান রয়েছে। তাঁদের পাশে রয়েছে দরগাহের ভূতপূর্ব মোতওয়াল্লী জনাব আবু তুরাব সাহেবের কবর। এখান থেকে পশ্চিমের প্রবেশ পথে বাহির হতে আরেকটি বেষ্টনীর পাশে দরগাহের আরো দুই জন মোতওয়াল্লী আবু নাসির ও আবু নসর পাশাপাশি অন্তিম শয্যায় শায়িত রয়েছে।

এই জায়গাটি বাংলার মুসলমান সুফি সাধকদের ধর্ম প্রচারের সাক্ষ বহন করে। হযরত শাহজালাল(রহঃ) বাংলাদেশের মুসলমানদের কাছে অধিক সন্মানিত একজন ধর্মপ্রচারক।বিশেষ করে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে।তিনি প্রতিনিয়ত শিরক বিদআতের বিরুদ্ধে সত্যিকার ইসলামকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন,যেকোনো অন্যায়,অবিচারের বিরুদ্ধে ছিলেন সদা প্রতিবাদি।তাইতো বাংলার মানুষ এখনো তাকে ভালবাসে।কোনরকম মাজার পুজাকে তিনি সমর্থন করতেন না।তিনি ছিলেন প্রকৃত ইসলাম প্রচারক।তাইতো বাংলার মানুষ এখনো তাকে ভালবাসে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসে এই জায়গাটি দেখার জন্য।সিলেটের সুনামকে অনেকাংশে বৃদ্ধি করেছে শাহজালাল (রহ)এই দরগাহ।
          দর্শনার্থী সমাগমের একাংশ                     জালালি কবুতর