ক্বীন ব্রীজ
বাংলাদেশের দর্শনীয় জায়গাগুলোর মধ্যে
অনেকটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সিলেট।সিলেটে রয়েছে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক
দৃশের সমাহার যা ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে।
সিলেটে এর একটি অন্যতম দর্শনীয় এবং ঐতিহ্যবাহি স্থান এর নাম হল ক্বীন ব্রীজ।সিলেটের
অদুরে সুরমা নদীর ওপর নির্মিত একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন এটি।অনেকে এই ব্রীজটিকে সিলেট শহরের "প্রবেশদ্বার" বলে থাকেন।
এর অবস্থান সম্পর্কে যতদূর জানা যায় এটি সিলেট শহরের অনেকটা কেন্দ্রস্থলে
ক্বীন ব্রীজটি অবস্থিত।আরও ভাললাগার বিষয় হল এর এক দিকে রয়েছে দক্ষিণ সুরমা ও অপর
দিকে রয়ছে তালতলা।
এর নামকরণ সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তা হল গত শতকের তিরিশের দশকের দিকে আসাম
প্রদেশের গভর্ণর হয়েছিলেন মিস্টার মাইকেল ক্বীন। তিনি সিলেট সফরে আসেন।তার এই
আগমনের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই এ ব্রীজটি নির্মাণ করা হয় এবং তারপর এই
ব্রীজটির নামকরণ করা হয় গভর্ণর মাইকেল ক্বীনের নামানুসারেই।
আর এটি তৈরির ইতিহাস হল আসাম প্রদেশের গভর্ণর মাইকেল ক্বীন এর সিলেট সফরে আসার
সময় সুরমা নদীতে কোন ব্রিজ ছিলনা। আর এজন্য সুরমা নদীতে
ব্রীজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।কারণ তখনকার সময় আসামের সাথে সিলেটের
যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল ট্রেন। ফলে, রেলওয়ে বিভাগ ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এবং
নির্মান শেষে ১৯৩৬ সালে ব্রীজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়।
তৎকালীন আসাম সরকারের এক্সিকিউটিভ সদস্য রায় বাহাদুর প্রমোদ চন্দ্র দত্ত এবং
শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল হামিদ ব্রীজটি নির্মাণের ক্ষেত্রে অশেষ অবদান রাখেন।
গঠন হল
ক্বীন ব্রীজ লোহা দিয়ে তৈরী। এর আকৃতি ধনুকের ছিলার মত বাঁকানো। এই ব্রীজটির
দৈর্ঘ্য ১১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট। ব্রীজ নির্মাণে তৎকালীন সময়ে ব্যয় হয়েছিল
প্রায় ৫৬ লাখ টাকা।
পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে মহান
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে ব্রীজের উত্তর
পাশের একাংশ উড়িয়ে দেয়;
যা স্বাধীনতার পর কাঠ ও বেইলী পার্টস দিয়ে মেরামত করা হয় ও হালকা যান
চলাচলের জন্য ব্যবহৃৎ হয়।
এরপর
আবার ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগিতায় ব্রীজের বিধ্বস্ত অংশটি কংক্রীট দিয়ে
পুনঃনির্মাণ করা হয় এবং তৎকালীন নৌ বাহিনীর প্রধান রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান
সংস্কারকৃত ব্রীজটি উদ্বোধন করেন; ফলে পুনরায় এটি দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়।বর্তমানে এই ব্রিজটী সৌন্দর্যের
প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে।