বায়েজীদ বোস্তামির মাজার,চট্টগ্রাম।

 
                  বায়েজীদ বোস্তামির মাজার

বাংলাদেশের আরেকটি সুপরিচিত জায়গার নাম হল বায়েজীদ বোস্তামির মাজার।এটি বাংলাদেশের মানুষ্রের কাছে একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে বেশ পরচিতি লাভ করেছে।এর অবস্থান হচ্ছে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম জেলার নাসিরাবাদ নামক স্থানে একটি উঁচু মানের পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। জানা যায় ইরানের বিখ্যাত পার্সিয়ান সুফি বায়েজিদ বোস্তামীর নামে গড়ে উঠা এই মাজার চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষের পাশাপাশি চট্টগ্রামে আসা দেশী বিদেশী পর্যটকদের জন্যও একটি অত্যন্ত আকর্ষনীয় স্থান।

এই মাজারের ইতিহাস সম্পর্কে যতদুর জানা যায় এই সমাধির অস্তিত্ব সর্বপ্রথম ১৮৩১ সালে আবিস্কার করা হয় পাহাড়ের উপরিভাগে একটি দেয়ালঘেরা আঙ্গিনার মাঝে। আঙ্গিনার ঠিক মাঝামাঝি একটি শবাধার অবস্থিত রয়েছে।আর পরবর্তীতে সমাধিস্থলটি আধুনিক কাঠামো দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়ছিল। সমাধি পাহাড়ের পাদদেশে একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ঠ মোঘলরীতির আয়তাকার মসজিদ এবং একটি বিশালাকার দীঘি রয়ছে।এর স্থাপত্যশৈলী কর্ম থেকে ধারণা করে এর সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায় তা হল মোঘল শাসনামলে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর সময় মসজিদটি নির্মিত হয়ছিল।এই মসজিদটি দেখতেও অনেক সুন্দর।

তবে এই মাজার সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হল যদিও বায়েজিদ বোস্তামীর নাম অনুসারে এই মাজার এর নামকরন করা হয়েছে এবং উনার সমাধিস্থল হিসেবে লোকমুখে পরিচিত তথাপি ইরানের বিখ্যাত সুফী বায়েজিদ বোস্তামীর এই অঞ্চলে আগমনের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়না।এটা অনেকটা ধারনার উপরেই প্রতিষ্ঠিত। ধারণা করা হয়ে থাকে যে ইসলাম প্রচারে আত্তনিয়োগকারী মহান বুজুর্গ সন্মানিত আলেম ওলামা ও সুফী সাধকগন অন্যান্য জায়গা থেকে এসেছিলেন চট্টগ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচারের মহান উদ্দেশে।তাঁরা সাধারনত পাহাড় কিংবা জঙ্গল বেষ্টিত অঞ্চল সমূহে আবাস স্থাপন করতেন এবং এইসব এলাকায় মাজার কিংবা এই জাতীয় বিভিন্ন ধরণের বেশ কিছু স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মাজারটাও মূলত উনাকে উৎসর্গ করে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিরূপ মাত্র।বায়েজিদ বোস্তামী বাংলাদশে মারা যাননি এবং উনার কবরও বাংলাদেশে দেয়া হয়নি।এটা সঠিক তত্ত।কিন্তু এই মাজারের ব্যাপারে ধারনা করা হয় যে মূলত উনাকে উৎসর্গ করে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিরূপ মাত্র।
 

বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের পাদদেশে একটি বিশাল আকৃতির দীঘি রয়েছে।এখানে রয়েছে কাছিম ও গজার মাছ যা বেশ বিখ্যাত বলে জানা যায়। আঞ্চলিকভাবে এদেরকে আবার অন্য দুটি নামে ডাকা হয়।আর সেগুলো হল মাজারী ও গজারী। বোস্তামীর কাছিম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি অত্যন্ত বিরল এবং চরমভাবে বিপন্নপ্রায় প্রজাতি হিসেবে পরিচিত।এখানে আরো উল্লেখ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বর্তমানে বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার প্রাঙ্গন ব্যতীত বিশ্বের আর কোথাও কাছিম ও গজার মাছের দেখা পাওয়া যায় না। এই মাজারের তত্বাবধায়ক কমিটির লোকদের দ্বারাই এদের প্রতিপালন করা হয় বলে শোনা যায়।আরও জানা যায় যে বর্তমানে মাজার প্রাঙ্গন সংলগ্ন এই দীঘিতে প্রায় দেড়শো থেকে সাড়ে তিনশো কচ্ছপের আবাস রয়েছে বলে ধারণা করে থাকেন এখানকার সংশ্লিষ্ট দায়িত্তশীলেরা।তবে প্রজনন ঋতুতে মাজারের মূল পাহাড়ের পেছনে এদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে এদের ডিম পাড়ার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

যদিও এই মাজারের ইতিহাস নিয়ে যতেষ্ঠো সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।এসব স্থান দর্শন করাকে অনেক ধর্মান্ধ মুসলমানেরা অতি পুন্নের কাজ বলে মনে করত,তবে এটি একটি ভুল ধারনা বলে ইসলাম বিশেষজ্ঞরা মত দিয়ছেন।এটা দেখা ধর্মের কোন অংশ না।এটাকে কেবল দর্শনীয় স্থান হিসেবে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের মাধ্যম হিসেবে দেখা যেতে পারে।এখানকার কাছিম ও গজার মাছ দর্শনার্থীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়।এখনো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারন মানুষেরা ছুটে আসে ঐতিহাসিক এই স্থানটি দেখার জন্য।

 
 বোস্তামীর কাছিম