তাজহাট জমিদারবাড়ী
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ব্হুল আলোচিত
ঐতিহ্যবাহী সুদর্শন জায়গাটির নাম তাজহাট রাজবাড়ী
বা তাজহাট জমিদারবাড়ী। এটি বাংলাদেশের
রংপুর শহরের অদূরে তাজহাটে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক প্রাসাদ যা এখন একটি জাদুঘর
হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রংপুরের পর্যটকদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান।
রাজবাড়ীটি রংপুর শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ৪ কিলোমিটার দূরে কৃষি ইন্সটিটিউটের পাশে সবুজ গাছপালা পরিবেষ্টিত পরিবেশে অবস্থিত।
যতদূর জানা যায় প্রাসাদটি বিংশ
শতাব্দীর শুরুর দিকে মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায় নির্মাণ করেন। মহারাজা গোপাল
রায় ছিলেন হিন্দু এবং পেশায় ছিলেন একজন স্বর্ণকার। কথিত আছে, তার মনমুগ্ধকর 'তাজ' বা মুকুটের কারণেই এ এলাকা তাজহাট নামে অভিহিত হয়ে আসছে।
১৯১৭ সালে নির্মিত ছোট-বড় ২৬ টি কক্ষের এ বিশাল ভবনটি ১৬ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১
খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রাসাদটি ব্যবহৃত হয় রংপুর হাইকোর্ট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একটি শাখা বা বেঞ্চ
হিসেবে।[১] ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রাসাদটিকে
একটি সংরক্ষিত স্থাপনা তথা স্থাপত্য হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশ সরকার এ
স্থাপস্ত্যের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবনে করতঃ ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে রংপুর জাদুঘরকে
সরিয়ে এ প্রসাদের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে আসে। অভিজাতমণ্ডিত এই প্রাসাদটি রংপুরের প্রত্ননিদর্শনের অন্যতম কীর্তি।
প্রাসাদের দ্বিতীয় তলায় বিভিন্ন মাটির তৈরি পুতুল ও হিন্দুদের দেব-দেবীর মূর্তি রয়েছে।প্রাসাদ চত্বরে রয়েছে বিশাল খালি মাঠ, গাছের সারি এবং প্রাসাদের দুই পাশে রয়েছে
দুইটি পুকুর। জাদুঘরে নির্দিষ্ট প্রবেশ মূল্য পরিশোধ করে প্রবেশ করা যায়। প্রাসাদটির পশ্চিমপার্শ্বে কিছু সুন্দর ফুলের বাগান রয়েছে। এটি বর্তমানে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
প্রাসাদটি প্রায়
২১০ ফুটের মত প্রশস্ত ও চার তলার সমান উঁচু। এতে সর্বমোট ৩১ টি সিড়ি আছে যার প্রতিটাই ইতালীয়
ঘরানার সুদর্শন মার্বেল পাথরে তৈরী। প্রাসাদের দক্ষিণপ্রান্তে ছোট্ট একটি
পুকুর এবং তার চারপাশে সবুজ গাছপালা রয়েছে যা দেখে দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হয়। সিঁড়ি থেকে উঠে জাদুঘর পর্যন্ত মেঝের পুরোটাও
একই পাথরে তৈরী। রাজবাড়ীর পশ্চাৎভাগে গুপ্ত সিঁড়ি রয়েছে। এই গুপ্ত সিঁড়ি কোন
একটি সুড়ংগের সাথে যুক্ত যা সরাসরি ঘাঘট নদীর সাথে যুক্ত এমন একটা জনশ্রুতি শোনা
যায় তবে সিড়ি টা এখন নিরাপত্তা জনিত কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রাসাদের
সুন্দর ফোয়ারাটি কালের বিবর্তনে শ্বেতশুভ্র মার্বেল ও তার সবুজাভ নকশা কিছুটা
মলিন হয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী
প্রাচীন এই স্থাপনাটি দেখার জন্য আসে।