বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র।


 


 
     বোটানিক্যাল গার্ডেন বা জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান

 বাংলাদেশের অধিক সৌন্দর্যময় ও অতি পরিচিত একটি বিনোদন কেন্দ্রের নাম বোটানিক্যাল গার্ডেন বা জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয় এটি। ঢাকার কেন্দ্রস্থল থেকে এটি ২০ কিলোমিটার দূরে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার পাশেই সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে অবস্থিত এই উদ্যান।

এই উদ্যানের আয়তন ২০৮ একর। ৫৭টি সেকশন নিয়ে গঠিত উদ্যানটি দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ সংগ্রহ সংরক্ষণ ও উদ্ভিদ জগতকে সমৃদ্ধ করার মুখ্য উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয় এই উদ্যানটি।

বোটানিক্যাল সায়েন্সকে সমৃদ্ধ করা এবং উদ্ভিদ গবেষণা ও প্রদর্শণের জন্য এটি একটি উপযুক্ত মাধ্যম। এখানে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও গবেষণার সহায়তা প্রদান এবং দর্শণার্থীদের জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের বিষয়টিও প্রাধান্য পেয়েছে। উদ্যানে রয়েছে ছোট-বড় জলাশয় যা আয়তনে প্রায় ১১ একর। তারমধ্যে একটি জলাশয়ের পাশে জলপ্রপাত ও লেক আছে। বর্তমানে ১১৪টি উদ্ভিদ পরিবারভূক্ত ৯৫০টি প্রজাতির গাছপালা নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনটি যেন একটি জীবন্ত সংগ্রহশালা। এখানে রয়েছে ২৫৫টি প্রজাতির ২৮২০০টি বৃক্ষ। ৩১০টি প্রজাতির ৮৪০০টি গুল্ম ও ৩৮৫টি প্রজাতির ১০৪০০টি বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ।

এছাড়াও রয়েছে ছয়টি নেট হাউজে বিরল প্রজাতির অর্কিড ও ক্যাকটাস। এই উদ্যানে ২২ প্রজাতির বাঁশ নিয়ে একটি বাঁশ বাগান, পাম বাগান, ফল বাগান, গজারি বন, মেডিসিনাল বাগান, ধাঁধাঁ হেজ, সার্ধশত বয়সের বটবৃক্ষ প্রভৃতি দর্শণীয় বস্তু।

বর্তমানে এটি শিক্ষা ও গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শণার্থী আসে ভ্রমণ করতে। উদ্ভিদের ছায়ায় কিছুটা ক্লান্তি ঘোচায়। অনেকে ছুটির দিনে পরিবারসহ ছুটে আসে। উদ্ভিদ সমৃদ্ধ এই উদ্যানটি বেশি প্রিয় তরুণ-তরুণীদের কাছে। সবুজ ছায়া ঘেরা এই উদ্যানটি যেন তার দর্শণার্থীদের হৃদয় জুড়ায়।

ক্বীন ব্রীজ,সিলেটের অনন্য সুন্দর একটি জায়গা



ক্বীন ব্রীজ




 বাংলাদেশের দর্শনীয় জায়গাগুলোর মধ্যে অনেকটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সিলেটসিলেটে রয়েছে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশের সমাহার যা ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে।
সিলেটে এর একটি অন্যতম দর্শনীয় এবং ঐতিহ্যবাহি স্থান এর নাম হল ক্বীন ব্রীজ।সিলেটের অদুরে সুরমা নদীর ওপর নির্মিত একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন এটিঅনেকে এই ব্রীজটিকে সিলেট শহরের "প্রবেশদ্বার" বলে থাকেন।

এর অবস্থান সম্পর্কে যতদূর জানা যায় এটি সিলেট শহরের অনেকটা কেন্দ্রস্থলে ক্বীন ব্রীজটি অবস্থিত।আরও ভাললাগার বিষয় হল এর এক দিকে রয়েছে দক্ষিণ সুরমা ও অপর দিকে রয়ছে তালতলা।

এর নামকরণ সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তা হল গত শতকের তিরিশের দশকের দিকে আসাম প্রদেশের গভর্ণর হয়েছিলেন মিস্টার মাইকেল ক্বীন। তিনি সিলেট সফরে আসেন।তার এই আগমনের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই এ ব্রীজটি নির্মাণ করা হয় এবং তারপর এই ব্রীজটির নামকরণ করা হয় গভর্ণর মাইকেল ক্বীনের নামানুসারেই

আর এটি তৈরির ইতিহাস হল আসাম প্রদেশের গভর্ণর মাইকেল ক্বীন এর সিলেট সফরে আসার সময় সুরমা নদীতে কোন ব্রিজ ছিলনা। আর এজন্য সুরমা নদীতে ব্রীজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।কারণ তখনকার সময় আসামের সাথে সিলেটের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল ট্রেন। ফলে, রেলওয়ে বিভাগ ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এবং নির্মান শেষে ১৯৩৬ সালে ব্রীজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়।

তৎকালীন আসাম সরকারের এক্সিকিউটিভ সদস্য রায় বাহাদুর প্রমোদ চন্দ্র দত্ত এবং শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল হামিদ ব্রীজটি নির্মাণের ক্ষেত্রে অশেষ অবদান রাখেন।

গঠন হল ক্বীন ব্রীজ লোহা দিয়ে তৈরী। এর আকৃতি ধনুকের ছিলার মত বাঁকানো। এই ব্রীজটির দৈর্ঘ্য ১১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট। ব্রীজ নির্মাণে তৎকালীন সময়ে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫৬ লাখ টাকা।
পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে ব্রীজের উত্তর পাশের একাংশ উড়িয়ে দেয়; যা স্বাধীনতার পর কাঠ ও বেইলী পার্টস দিয়ে মেরামত করা হয় ও হালকা যান চলাচলের জন্য ব্যবহৃৎ হয়।

এরপর আবার ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগিতায় ব্রীজের বিধ্বস্ত অংশটি কংক্রীট দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয় এবং তৎকালীন নৌ বাহিনীর প্রধান রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান সংস্কারকৃত ব্রীজটি উদ্বোধন করেন; ফলে পুনরায় এটি দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়।বর্তমানে এই ব্রিজটী সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে।